ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

সেই নারী সাংবাদিকের পরিচয় গোপন করা নিয়ে যা বলছেন স্বজনরা

আপলোড সময় : ০৩-০৩-২০২৪ ১১:০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ০৩-০৩-২০২৪ ১১:০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
সেই নারী সাংবাদিকের পরিচয় গোপন করা নিয়ে যা বলছেন স্বজনরা সংগৃহীত
ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। মৃত্যুর খবর জানার পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত লাশ বুঝে না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। 
শনিবার বিকাল পর্যন্ত লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। নিহত সাংবাদিকের বাবা শাবলুল আলম সবুজজ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ শনিবার সকালে লাশ বুঝিয়ে দেবে বলেছিল। কিন্তু এখনো ক্লিয়ারেন্স বা মরদেহ কিছুই দেওয়া হয়নি।’

নিহতের মেজো বোন ঝর্ণা খাতুন বলেন, ‘লাশ বুঝে নিতে ঢাকায় রয়েছেন বাবা। বৃষ্টি খাতুন নাকি অভিশ্রুতি শাস্ত্রী এ দুই নামের জটিলতায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের মর্গে পড়ে আছে বোনের মরদেহ। হস্তান্তর নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। তাই লাশ নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাবা।’

এদিকে ‘পরিবার বা নিকটাত্মীয় স্বজনদের অজান্তে নিজ পরিচয় গোপন করে বা ছদ্মনাম ধারণের পরিনতি শুভকর নয়’ এমন মন্তব্য করেছেন বৃষ্টি খাতুনের নিকটাত্মীয় ও তার স্কুল কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ৪-৫ মাস আগে হঠাৎ বৃষ্টি খাতুন ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ নাম ধারণ করে একটি ফেসবুক আইডি খুলে। সেখানে তার ওয়ালের ছবিগুলোর মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের আধিক্য এবং ওই বন্ধুদের সঙ্গে হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়।

ফেসবুকের এসব ছবিগুলোই আজ জনমনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে জীবনের শেষ পরিণতিতে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। ফলে মৃত্যুর পরও তার মরদেহ নিয়ে পরিবারকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সে কারণে আপনি যেই হোন আপনার সঠিক পরিচয়ের মূল ভিত্তি হলো পরিবার। 

বৃষ্টি খাতুনের এই শিক্ষক বলেন, স্কুলজীবনে বৃষ্টি খাতুন পড়ালেখায় বেশ মেধাবী ছিল, ওর উচ্চ স্বপ্ন ছিল। বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করবে বলে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। অথচ এক উশৃঙ্খল এলোমেলো জীবনবৃত্তে চলতে গিয়ে পা পিছলে ছিটকে ঝরে গেল একটা সম্ভাবনাময় প্রতিভা। 

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনের বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি করেন। নিহতের মা বিউটি বেগম ও ছোট ২ বোন একাদশ শ্রেনীতে পড়ুয়া ঝর্ণা ও দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা খাতুনকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। দরিদ্র বাবার তিনটিই কন্যা সন্তান। কন্যা হারানোর শোকে কাতর বিউটি নির্বাক হয়ে পড়েছেন। 

নিহতের চাচা জোয়াদ আলী জানান, ভাই সবুজ ঢাকায় ছোট চাকরি করেন। অভাবের মধ্যেই মেয়েকে বাইরে রেখে শিক্ষিত করার চেষ্টা করছিলেন। গত ঈদেও বৃষ্টি বাড়ি এসে সবার সঙ্গে হৈহুল্লোড় করে গেল। সবার সঙ্গে ঈদে আনন্দ করেছে মেয়েটি। 

বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মজিদও বৃষ্টি খাতুনের অকাল মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, বৃষ্টি মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী ছিল। অথচ নিজের পরিচয় জটিলতায় আজ তার পরিবারকে মরদেহ নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

এদিকে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে জানা যায় নিহতের নাম বৃষ্টি খাতুন। অন্যদিকে তিনি তার নাম ব্যবহার করতেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। নামের এই জটিলতার কারণে তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হওয়ায় এখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হবে। পরে নাম-পরিচয় ও লাশ হস্তান্তর নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ